বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৪

বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৪ এর প্রতিপাদ্য বিষয় হল ” USE HEART FOR ACTION”

অধ্যাপক ডা: .কে.এম মনজুরুল আলম, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা

ডা: নুরুল আলম সিদ্দিকী, সহকারী রেজিস্ট্রার, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা

 

‘বিশ্ব হার্ট দিবস’ ২৯ সেপ্টেম্বর। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো ‘ইউজ হার্ট ফর অ্যাকশন’ যদি বাংলায় বলি অর্থ দাঁড়ায় ‘কর্মের জন্য হৃদয়‘ বা ব্যপকার্থে “জীবন বাঁচাতে চাই কর্মউদ্যোগ”।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে মিলে বিশ্ব হার্ট ফেডারেশন ১৯৯৯ সালে প্রতি বছর ২৯ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব হার্ট দিবস’ পালনের ঘোষণা দেয়। সে ধারাবাহিকতায় হৃদরোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ২০০০ সাল থেকে দিনটি পালিত হচ্ছে। ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী মানুষের হার্টের বা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিসের সচেতনতা বৃদ্ধি ও যত্ন নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাতে ‘ইউজ হার্ট ফর অ্যাকশন’ থিমের অধীনে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে ।

হৃদরোগ বর্তমান বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক ব্যাধী। হৃদরোগ বলতে মূলতঃ হার্ট এ্যাটাক ও উচ্চ রক্তচাপজনিত হার্টের অসুখকে বুঝায়। এছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাতজ্বরজনিত ভাল্বের হৃদরোগও একটি বড় সমস্যা। হৃদরোগ একটি অসংক্রামক ব্যাধি। উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদরোগ, ব্রেইন স্ট্রোক, ডায়াবেটিস হচ্ছে অসংক্রামক ব্যাধিসমূহের অন্তর্ভুক্ত। ২০২৫ সালের মধ্যে ২৫ ভাগ বৈশ্বিক অসংক্রামক ব্যাধি মৃত্যু হ্রাসের জন্য ২০১২ সাল থেকে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন (World heart federation) বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করে যাচ্ছে।

চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিভাষায় হৃদরোগকে বলা হয় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন। হৃদরোগের কারণ হলো হার্টে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত বা বন্ধ হয়ে যাওয়া। হৃদযন্ত্র বা হার্ট সচল থাকতে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। আর করোনারি ধমনী হৃদযন্ত্রে ওই অক্সিজেন সরবরাহ করে। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অনিয়মিত জীবনযাপনে করোনারি ধমনীর ভেতরের দেয়ালে ফ্যাট বা চর্বি জমে যায়। এর ফলে সময়ের সঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। কার্ডিয়াক ইস্কেমিয়ার পরিস্থতি তৈরি হয়, যাতে হৃদযন্ত্রে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। বেশ কিছু সময় পর্যন্ত বুঝতে না পারলে বা চিকিৎসায় দেরি হলে হৃদযন্ত্রের কোষগুলোর একে একে মৃত্যু ঘটে। তাতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন মানুষ। আজকাল মানুষ অল্প বয়সেই নানা ধরনের রোগ ও সমস্যার শিকার হচ্ছে। হার্ট সংক্রান্ত সমস্যা আজকাল খুব সাধারণ হয়ে উঠেছে। আজকাল তরুণরাও হার্ট অ্যাটাকের শিকার হচ্ছেন। মূলত ডায়াবেটিস মেলিটাস, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, ডিজলিপিডিমিয়া বা উচ্চ কোলেস্টোরলের মাত্রা, অতিরিক্ত মেদ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, মানসিক চাপ হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী।

বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৪অতিরিক্ত মেদ বা স্থুলতা হার্ট এ্যাটাকের একটি বড় ঝুঁকি। স্থুলতায় উচ্চ রক্তচাপ, ডিজলিপিডিমিয়া, ডায়াবেটিস সমস্যা তৈরী করে। প্রয়োজনের তুলনায় যদি অতিরিক্ত ক্যালরী গ্রহণ করা হয় তাহলে দেহের ওজন বেড়ে যায়। যত বেশী কায়িক শ্রম করা হয় তত বেশী ক্যালরীর প্রয়োজন হয়। সারাদিন যে পরিমাণ এনার্জি প্রয়োজন হয় তা পূরণের জন্য যে পরিমাণ ক্যালরী খাওয়ার দরকার, এর বেশী হলে একে স্থুলতা বলা হয়। অতএব সবার আদর্শ ওজন রাখার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে যার ফলশ্রুতিতে স্থুলতাজনিত জটিলতা থেকে মুক্ত থাকতে পারবো।

ডিজলিপিডিমিয়া বা উচ্চ কোলেস্টোরলের হার্ট এ্যাটাকের একটি অন্যতম কারণ। ডিজলিপিডিমিয়া  হলো রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাধিক্য বিশেষ করে এল.ডি.এল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কোলেস্টেরল মাত্রাতিরিক্ত অবস্থাকে ডিজলিপিডিমিয়া বলে। এর ফলে দেহের রক্তনালীতে কোলেস্টেরল চর্বি জমা হয়ে atherosclerotic block তৈরী হয়। ফলশ্রুতিতে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহের রক্তনালী যেমন – হার্ট, মস্তিষ্ক, চোখ, কিডনী, পেট ও পায়ের রক্তনালী ইত্যাদিতে রক্তপ্রবাহ বাধা প্রাপ্ত হয় এবং কোনো এক পর্যায়ে এসমস্ত অঙ্গসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত বা বিকল হয়ে যেতে পারে। সাধারণতঃ সম্পৃক্ত চর্বি যার উৎস প্রাণীজ চর্বি বিশেষ করে গরু-খাসীর মাংস, ঘি, মাখন ইত্যাদি বেশী খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। আর যাদের বংশে এর ইতিহাস রয়েছে তাদের অতি অল্প বয়সে এই atherosclerotic block তৈরী হয়ে অকাল মৃত্যু ঘটাতে পারে। সঙ্গত কারণে আমাদের খাদ্যাভাসে অতিরিক্ত সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার পরিমিতভাবে খেতে হবে বা পরিহার করতে হবে।

 

Leave a Comment