বাইপাস সার্জারি কি এবং বাইপাস সার্জারির খরচ কত
বাইপাস সার্জারি
করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফ্টিং (CABG) বা বাইপাস সার্জারি হল এমন এক হার্ট সার্জারি যা আমাদের হার্টে বাইপাসের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন এবং হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে । এটি এমন একটি সার্জিকাল পদ্ধতি যা কিনা গুরুতর হার্টের রোগীদের জন্য অত্যাবশক এবং এটি করোনারি আর্টারি ডিজিজ নামেও পরিচিত । একটি সুস্থ্য ধমনী শরীরের অন্য অংশ থেকে নেওয়া হয় (সাধারণত হাত বা বুক থেকে) এবং পা থেকে একটি সুস্থ্য শিরা নেওয়া হয় এবং হার্টের অবরুদ্ধ(ব্লক হয়ে যাওয়া) ধমনীতে সংযুক্ত করা হয় ।
নতুন যুক্ত করা সুস্থ্য ধমনী বা শিরা করোনারি আর্টারির ব্লক হওয়া অংশকে অতিক্রম করে । এবং এটি একটি নতুন রাস্তা তৈরি করে যেটার মাধ্যমে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হার্টে প্রবেশ করতে পারে। আজকে আমরা বাংলাদেশে বাইপাস সার্জারি কি এবং বাইপাস সার্জারির খরচ কত সেটা বিস্তারিত জানবো এবং আলোচনা করবো-
বাংলাদেশ একটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ যেখানে ১৮০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বসবাস করে শুধুমাত্র ১৪৮৪৬০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায়। বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে অতি দ্রুত গতিতে নগরায়ণ ঘটেছে । যার ফলস্বরূপ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে সম্প্রতি এটি একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
এই বৃদ্ধি এবং নগরায়নের সাথে সাথে অসম খাদ্যাভাস এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনও বেড়েই চলেছে। যার ফলস্বরূপ সব ধরনের সাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ার সাথে সাথে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর উপমহাদেশের বেশিরভাগ মানুষই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে এবং সঠিকভাবে রোগ নিরূপণ করতে না পারার কারণে কার্ডিয়াক এরেস্ট হয়ে অনেক মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছে।
নিম্নলিখিত লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি করোনারি ধমনী রোগ বা হৃদরোগ নির্দেশ করতে পারে-
-এনজাইনা বা বুকে ব্যথা
-সিড়ি দিয়ে উঠতে কষ্ট হওয়া
-অস্বাভাবিক ভাবে ঘেমে যাওয়া
-শ্বাসকষ্ট হওয়া, ক্লান্তি ভাব লাগা
-বুক ধড়ফড় করা
-অস্বাভাবিক হার্টের ছন্দ বা অ্যারিথমিয়া
বর্তমান সময়ে হৃদরোগের সবচেয়ে উন্নত এবং নির্ভরযোগ্য চিকিৎসার নাম হচ্ছে বাইপাস সার্জারি। বাইপাস সার্জারি কি আমরা উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
মূলত এটা হল এমন একটি প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুরনো ব্লক হয়ে আটকে যাওয়া ধমনী বা শিরাগুলোকে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে নতুন এবং সুস্থ ধমনী নিয়ে বাইপাস তৈরি করে দেওয়া হয় যাতে আমাদের হার্টে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল অব্যাহত থাকে। হার্টের কোন করনারি ধমনী বন্ধ হয়ে, হার্টে যদি স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ না হয় তাহলে বাইপাস সার্জারীর প্রয়োজন হয়।
বাইপাস সার্জারির প্রকারভেদ:
বাইপাস সার্জারি অনেক প্রকার হয়ে থাকে এবং রুগীর অবস্থাভেদে কার্ডিয়াক সার্জনদের এনজিওগ্রাম পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক রোগ নিরুপন করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে কোন রোগীর জন্য কোনটি প্রযোজ্য।
সাধারণত আমরা যেসব বাইপাস সার্জারি করে থাকি তা হল-
-টোটাল আর্টারি বাইপাস
-বিটিং হার্ট বাইপাস সার্জারি
-মিডক্যাব বাইপাস সার্জারি
-ভেনাস বাইপাস সার্জারি
-রেডো বাইপাস সার্জারি
-কনভেনশনাল বাইপাস সার্জারি
১৯৮১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে প্রথম ওপেন-হার্ট অপারেশন করা হয়েছিল। এরপর থেকে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় বিভিন্ন ধরনের বাইপাস সার্জারি আবিষ্কৃত হয় এবং বাইপাস সার্জারি অনেক নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে একই সাথে বাইপাস সার্জারির পর মৃত্যুর হার বলতে গেলে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা সম্ভব হয় । সবচেয়ে উন্নত এবং আধুনিক বাইপাস সার্জারি হলো বিটিং হার্ট বাইপাস সার্জারি। এটি ১৯৯০ সালের শেষের দিকে USA তে আবিষ্কৃত হয় পরে ভারতেও একই পদ্ধতিতে বাইপাস সার্জারি শুরু করা হয়। এই পদ্ধতিতে হার্টকে সচল রেখেই বাইপাস অপারেশন করা হয়।
বিটিং হার্ট সার্জারি করার সুবিধা গুলা হল –
-রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে।
-সার্জারির সময় মৃত্যুঝুকি কম থাকে।
-কিডনি ফেইলিয়র হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
-সার্জারি পরবর্তীকালীন জটিলতা কম হয়।
বাইপাস সার্জারির খরচ কত
নিম্নোক্ত আমাদের বাইপাস সার্জারির প্যাকেজের বর্ণনা দেয়া হলো-
মূলত আমরা যেসব সার্জারি করে থাকি:
-বাইপাস সার্জারি
-বাল্ব সার্জারি
-কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ
| SL. | Name of Procedure | Amount | Duration Of Stay |
| 01 | Angiogram (CAG) | 18000/- to 25000/- | one (01) day |
| 02 | Bypass Surgery (CABG) Normal | 2,50,000/- to 3,50,000/- | Ten (10) days |
| 03 | Midcab Bypass Surgery | 4,50,000/- to 5,50,000/- | Five (05) days |
| 04 | Valve Surgery | 3,00,000/- to 3,50,000/- | Ten (10) days |
| 05 | Congenital Heart Surgery (ASD, VSD, PDA, TOF) | 2,50,000/- to 3,50,000/- | Eight (08) days |
| 06 | ASD and PDA ( Midcab) | 3,50,000/- to 4,50,000/- | Five (05) days |

বাইপাস সার্জারির পর সমস্যা ও ঝুঁকি
বাইপাস সার্জারি একটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন হওয়া সত্তেও প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় এবং সার্জনদের নিপুন হাতের দক্ষতায় সার্জারি পরবর্তী কোনো জটিলতা, সমস্যা বা ঝুকি নেই বললেই চলে। বাইপাস সার্জারির পর সমস্যা বা বাইপাস সার্জারির ঝুঁকি এখন আর সেরকম নেই বললেই চলে যদি না রোগীর অন্য কোনো শারিরীক জটিলতা থাকে । যেমন ডায়াবেটিকস বা হাইপারটেনশন থাকলে ইনফেকশনের সম্ভাবনা থেকে যায় বা শরীরে চর্বি বা মেদ বেশি থাকলে অপারেশন পরবর্তী অনেক জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। সেক্ষেত্রে সার্জনরা রোগীকে শারিরীকভাবে ফিট করে তারপর বাইপাস সার্জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন ।
সর্বোপরি,আশার কথা এই যে বাইপাস সার্জারীতে এখন মৃত্যুর হার বড়জোর ১% থেকে ২% এবং একটি সফল বাইপাস সার্জারির পর রোগী অনেক সুস্থ্য অনুভব করেন, প্রফুল্ল অনুভব করে, মৃত্যু ঝুকি কমে যায় এবং নতুন বাইপাসের কারণে একটি উন্নত জীবন লাভ করেন। একইসাথে খুব শীঘ্রই সুস্থ হয়ে রোগী পরিপূর্ণভাবে নিয়মিত জীবনে ফিরতে পারে।
তবে অবশ্যই কার্ডিয়াক সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। সেগুলো হল-
-স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়া দাওয়া করতে হবে
-ধূমপান ছাড়তে হবে
-ওজন ঠিক রাখতে হবে
-নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে
-মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
অধ্যাপক ডাঃ এ কে এম মনজুরুল আলম এবং তার টিম সর্বদাই কার্ডিয়াক রোগীদের সবচেয়ে সেরা এবং ভালো সার্জারী করতে এবং পৃথিবীর সেরা চিকিৎসা দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। একইসাথে আমরা সার্জারি পরবর্তী সময়ে রোগীকে নিয়মিত ফলোআপের মাধ্যমে রোগীর সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করে থাকি। অতএব কার্ডিয়াক রোগীদের নিয়ে অবহেলা না করে দ্রুত যোগাযোগ করুন, চিকিৎসা নিন এবং বাকি জীবন সুস্থ্য থাকুন।
আমাদের সাথে যোগাযোগের ঠিকানা
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট
শের-ই-বাংলা নগর
রুম নং: ৩৪৫
সময়: ৮.০০ থেকে ২.৩০ পর্যন্ত
শুক্রবার এবং সরকারি ছুটির দিন বন্ধ
চেম্বার ১
গ্রীন লাইফ হসপিটাল
রুম নং:৩০৫ (৩য় তলা)
সময়:৫.০০ থেকে ৯.০০ পর্যন্ত
সিরিয়ালের জন্য কল করুন: ০১৭০০-৭৪৩০৭১, ০১৭০০-৭৪৩০৭২
চেম্বার ২
চাটখিল শিশু-কিশোর এবং স্পেশালাইজড হসপিটাল
জাপান প্লেস, সি এন্ড বি রোড, চাটখিল, নোয়াখালী
প্রত্যেক মাসের দ্বিতীয় এবং চতুর্থ শুক্রবার
সময়:১০.০০ থেকে ৫.০০ পর্যন্ত
সিরিয়ালের জন্য কল করুন: ০১৭০০-৭৪৩০৭১, ০১৭০০-৭৪৩০৭২



